মান লিপিবদ্ধ করার বিভিন্ন পদ্ধতিঃ
রেজিস্টরের মানকে লিপিবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। রেজিস্টরের আকার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহন করা হয়। সাধারণতঃ রেজিস্টরের আকার বড় হলে ডেসিম্যাল সংখ্যার মাধ্যমে মান লিখে প্রকাশ করা হয়। ক্ষুদ্রাকৃতির রেজিস্টর যেমন কর্বন কম্পোজিশন রেজিস্টর, কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর ইত্যাদির ক্ষেত্রে রঙ্গীন কোড ব্যবহার করে মান লিপিবদ্ধ করা হয়। নিচে রেজিস্টরের মান লিপিবদ্ধ করার কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি দেখানো হলোঃ
১। কালার কোডিং পদ্ধতি
২। ডেসিম্যাল নাম্বার পদ্ধতি
৩। চীপ রেজিস্টর কোডিং বা নাম্বার কোডিং পদ্ধতি
২। ডেসিম্যাল নাম্বার পদ্ধতি
৩। চীপ রেজিস্টর কোডিং বা নাম্বার কোডিং পদ্ধতি
নিম্নে পদ্ধতিগুলো যথাসম্ভব বিস্তারিত আলোচিত হলো।
১। কালার কোডিং পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে রেজিস্টরের গায়ে ভিন্ন ভিন্ন রঙ্গের কতকগুলি কোড (Strip) প্রিন্ট করা থাকে, এগুলিকে কালার ব্যান্ড বা কালার কোড বলা হয়। প্রত্যেক রঙ্গের জন্য একটি করে মান নির্দিষ্ট করা আছে। পাশাপাশি অবস্থিত কোডসমূহ মিলে বিশেষ নিয়মে একটি মান প্রকাশ করে যা দ্বারা ঐ রেজিস্টরের ওহমিক মান উপস্থাপিত হয়। রেজিস্টরের মান প্রকাশের এই পদ্ধতিকে কালার কোডিং পদ্ধতি বলা হয়। কালার কোডিং পদ্ধতিটি আবার কয়েক ধরণের হয়ে থাকে।
ক) ৪ ব্যান্ড পদ্ধতি
খ) ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি
খ) ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি
সকল প্রকার কোডিং পদ্ধতিতে কালার কোড সমূহের মান অভিন্ন। নিম্নের ছকে এই কালার সমূহের মান উল্লেখ করা হলোঃ
ক) ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিঃ
৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে মোট ৪টি ব্যান্ড থাকে। প্রথম দুটি ব্যান্ড ওহমিক মানের প্রথম দুই ডিজিট প্রকাশ করে। তৃতীয় ব্যান্ড গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ৪র্থ ব্যান্ডটি রেজিস্টরের টলারেন্স মানের জন্য নির্ধারিত।
প্রথম দুটি ব্যান্ডের মান পর্যায়ক্রমে বসিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যাকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করলে রেজিস্টরের ওহমিক মান পাওয়া যায়। চিত্রের উদাহরণটি লক্ষ করি – এখানে প্রথম ব্যান্ড হলুদ, এর মান ৪ এবং ২য় ব্যান্ড বেগুনী এর মান ৭ পর্যায়ক্রমে বসিয়ে পেলাম ৪৭, এবার ৩য় ব্যান্ডের লাল রঙের জন্য গুণক রাশির মান ১০২ তাই ৪৭ সংখ্যাটিকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করে পাই ৪৭x১০২ = ৪৭০০। একক অবশ্যই ওহম। ৪র্থ ব্যান্ডে রয়েছে রূপালী রং যার টলারেন্স মান ±১০%। সুতরাং রেজিস্টরের সর্বোচ্চ মান হবে ৪৭০০+৪৭০০x১০/১০০ = ৫১৭০ ওহম এবং সর্বনিম্নমান হবে ৪৭০০–৪৭০০x১০/১০০ = ৪২৩০ ওহম। অর্থাত রেজিস্টরটির মান ৪২৩০ হতে ৫১৭০ ওহমের মধ্যে যে কোন মান হতে পারে।
উল্লেখ্য যে ১০ ওহমের কম মানের রেজিস্ট্যান্স প্রকাশের জন্য তৃতীয়/গুণক ব্যান্ডে সোনালী অথবা রূপালী রং ব্যবহৃত হয়।
খ) ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিঃ
৪ ব্যান্ড পদ্ধতির একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো এই পদ্ধতিতে অতি সূক্ষ ওহমিক মানগুলি প্রকাশ করা যায় না। যেমন কোন রেজিস্টরের মান ৬.৮৫ ওহম। এই মানটি প্রকাশের জন্য ৪ ব্যান্ড পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে এক দশমিক স্থান পর্যন্ত খন্ডিত মান প্রকাশ করা যায়, কিন্তু দুই দশমিক স্থান পর্যন্ত খন্ডিত মান প্রকাশ করা যায় না। এ জন্য ৫ ব্যান্ড পদ্ধতির প্রচলন হয়েছে। এই পদ্ধতিতে দুই দশমিক স্থান পর্যন্ত ওহমিক মান প্রকাশ করা যায়। তাই বলা যায় ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ৪ব্যান্ড পদ্ধতির তুলনায় ১০ গুণ সূক্ষ ওহমিক মান উপস্থাপন করা যায়।
৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে প্রথম তিনটি ব্যান্ড রেজিস্টরের ওহমিক মানের প্রথম তিনটি ডিজিট উপস্থাপন করে। চতুর্থ ব্যান্ডটি গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এবং ৫ম ব্যান্ডটি টলারেন্স মান প্রকাশ করে।
প্রথম ৩টি ব্যান্ডের মান পর্যায়ক্রমে বসিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যাকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করলে রেজিস্টরের ওহমিক মান পাওয়া যায়। চিত্রের উদাহরণটি লক্ষ করি – এখানে প্রথম ব্যান্ড নীল, এর মান ৬ এবং ২য় ব্যান্ড ধূসর এর মান ৮, তৃতীয় ব্যান্ডের কালো রঙের জন্য ০ পর্যায়ক্রমে বসিয়ে পেলাম ৬৮০, এবার চতুর্থ ব্যান্ডে লাল রঙের জন্য গুণক রাশির মান ১০২ তাই ৬৮০ সংখ্যাটিকে গুণক রাশির মান দ্বারা গুণ করে পাই ৬৮০x১০২ = ৬৮০০০। একক অবশ্যই ওহম। ৫ম ব্যান্ডে রয়েছে সোনালী রং যার টলারেন্স মান ±৫%, অর্থাত মূল ওহমিক মানের ±৫% টলারেন্স নির্ধারণ করতে হবে। সুতরাং রেজিস্টরের সর্বোচ্চ মান হবে ৬৮০০০+৬৮০০০x১০/১০০ = ৭৪৮০০ ওহম এবং সর্বনিম্নমান হবে ৪৭০০–৪৭০০x১০/১০০ = ৬১২০০ ওহম। অর্থাত রেজিস্টরটির মান ৭৪৮০০ হতে ৬১২০০ ওহমের মধ্যে যে কোন মান হতে পারে।
উল্লেখ্য যে ১০ ওহমের কম মানের রেজিস্ট্যান্স প্রকাশের জন্য চতুর্থ/গুণক ব্যান্ডে সোনালী অথবা রূপালী রং ব্যবহৃত হয়।
নোটঃ উপরের ছকে কালারসমূহের জন্য নির্ধারিত মান দেখানো হয়েছে। সকল পদ্ধতিতে প্রথম ব্যান্ডে কালো, সোনালী, রূপালী রঙসমূহ কখনোই ব্যবহার হয় না। সকল পদ্ধতিতে দ্বিতীয় ব্যান্ডে সোনালী ও রূপালী রঙসমূহ কখনোই ব্যবহার হয় না। ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে তৃতীয় ব্যান্ডে সোনালী ও রূপালী রঙসমূহ ব্যবহার হয় না। ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ৪র্থ ব্যান্ডে শুধু সোনালী ও রূপালী রং ব্যবহৃত হয় অন্য কোন রং ব্যবহৃত হয় না। ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ৫ম ব্যান্ডে কালো, কমলা, হলুদ, ধুসর, সাদা রং ব্যবহৃত হয় না। উল্লেখিত নিষেধাজ্ঞা ব্যতিত সকল ব্যান্ডে সকল রং সমূহ ব্যবহৃত হতে পারে।
বিষয়টি একটি ছকের মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করি।
প্রথম ব্যান্ডটি নির্ধারণের কৌশলঃ
ছাত্র ছাত্রীরা এই বিষয়টি প্রায়ই ভুল করে। প্রথম ব্যান্ড নির্ধারণ করতে গিয়ে শেষ ব্যান্ডকে ১ম ব্যান্ড মনে করে। এই বিভ্রান্তি দুর করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
১ম কৌশলঃ আমরা জানি প্রথম ব্যান্ডে কখনোই কালো, সোনালী, রূপালী এই রংগুলি ব্যবহার হয় না। তাই এই রংগুলি রেজিস্টরের প্রান্তীয় ব্যান্ডে পাওয়া গেলে সেটি হবে শেষ ব্যান্ড এবং তার বিপরীত প্রান্তীয় ব্যান্ডটি হবে প্রথম ব্যান্ড।
২য় কৌশলঃ ১ম ব্যান্ড প্রান্ত হতে নিকটবর্তী হয় এবং শেষ ব্যান্ডটি তার প্রান্ত হতে দূরবর্তী হয়। এক্ষেত্রে যে প্রান্তীয় ব্যান্ডটি প্রান্ত হতে বেশী নিকটবর্তী তা-ই প্রথম ব্যান্ড হিসাবে বিবেচিত। বিষয়টি একটি চিত্রের মাধ্যমে বুঝি।
প্রথম ব্যান্ডকে সর্ববামে রেখে রেজিস্টরটি ধরলে পর্যায়ক্রমে ডান দিকে ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম ব্যান্ড নির্ধারিত হবে।
শূণ্য (০) ওহম রেজিস্টরঃ আপনারা বিশ্বাস করুন অথবা না করুন। বাস্তবে শূণ্য ওহম রেজিস্টর রয়েছে। এই রেজিস্টরের বডিতে শুধুমাত্র একটি মোটা কালো রঙের ব্যান্ড দ্বারা এর মান প্রকাশ করা হয়। বাস্তবে এর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই মনে হয়, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে প্রয়োজন আছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে পিসিবিতে কম্পোনেন্ট সোল্ডারিং করার জন্য অটোমেশন সিস্টেম বা রোবট ব্যবহার করা হয়, এই রোবটগুলি জাম্পার ওয়্যার সোল্ডারিং করতে পারেনা কিন্তু রেজিস্টর সোল্ডারিং করতে পারে, কারণ ওয়্যার রেজিস্টরের তুলনায় বেশী সরু ও সূক্ষ। তাই এই রোবটগুলির কাজের সুবিধার্থে শূণ্য ওহম রেজিস্টর তৈরী করা হয়। এদের ওহমিক মান শূণ্যের খুব নিকটবর্তী।
২। ডেসিম্যাল নাম্বার পদ্ধতিঃ
সাধারণতঃ বড় আকৃতির ওয়্যারউন্ড রেজিস্টরের গায়ে রেজিস্টরের মান সংখ্যায় লিখে প্রকাশ করা হয়। কখনো কখনো ছোট আকৃতির ওয়্যারউন্ড রেজিস্টরের গায়ে কালার কোডিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। চিত্রে একটি ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর দেখানো হয়েছে যাতে XICON এবং 7W100WJ লিখা রয়েছে। এখানে XICON শব্দটি উৎপাদনকারী কোম্পানীর নিজস্ব কোড এবং 7W100WJ শব্দটি দ্বারা বুঝায় রেজিস্টরটির পাওয়ার রেটিং ৭ ওয়াট, এর ওহমিক মান ১০০ ওহম এবং টলারেন্স J অক্ষরের জন্য ±৫%। বিভিন্ন অক্ষরের জন্য টলারেন্সের মান নিচের টেবিলে উপস্থাপিত হলো।
৩। চীপ রেজিস্টর কোডিং পদ্ধতিঃ
চীপ রেজিস্টরগুলি চ্যাপ্টাকৃতি কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর। এগুলি ক্ষুদ্রাকৃতির হয় কারণ এগুলি সুক্ষ ইলেকট্রনিক সিস্টেম বিশেষ করে মাদারবোর্ড, র্যাম ইত্যাদি ডিভাইসে লাগানো হয়। তিনটি ডেসিম্যাল ডিজিট দ্বারা বিশেষ কোডিং পদ্ধতিতে এই রেজিস্টরগুলির মান প্রকাশ করা হয়। প্রথম ডিজিটে ১ থেকে ৯ এর মধ্যে যে কোন অংক হতে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিজিটে ০ থেকে ৯ এর মধ্যবর্তী যে কোন অংক হতে পারে। এর প্রথম দুটি ডিজিট ওহমিক মানের প্রথম দুটি অংক প্রকাশ করে। তৃতীয় ডিজিট গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। চিত্র-ক তে চীপ রেজিস্টরের কোডিং দেখানো হয়েছে। চিত্র-খ তে প্রদর্শিত কোড ৫৬২ এর প্রথম দুটি ডিজিট নিয়ে প্রাপ্ত সংখ্যা ৫৬ কে গুণক রাশির মান ১০২ দ্বারা গুণ করে পাই ৫৬০০। একক অবশ্যই ওহম। অনেক সময় খন্ডিত মান প্রকাশ করার জন্য দ্বিতীয় ডিজিটে একটি R লেখা হয়। চিত্র-গ তে প্রদর্শিত 5R6 এর অর্থ হলো ৫.৬ ওহম। এই হলো তিন ডিজিটের মাধ্যমে কোডিং পদ্ধতি।
যদি কোডে ৪ ডিজিট থাকে তাহলে প্রথম তিন ডিজিট ওহমিক মানের প্রথম তিনটি অংক প্রকাশ করবে এবং চতুর্থ ডিজিটটি গুণক রাশি হিসাবে ব্যবহৃত হবে। বাকী সকল নিয়ম একই।
শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টরঃ
চিত্র-ঘ তে শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টরের প্রতীক দেখানো হয়েছে। একটি H আকৃতির চিহ্ন দ্বারা শূণ্য ওহম চীপ রেজিস্টর বোঝানো হয়।
সূত্রঃ
উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্র
Basic Electronics Solid State – B. L. Theraja
Basic Electronics – Bernard Grob
Wikipedia
Basic Electronics Solid State – B. L. Theraja
Basic Electronics – Bernard Grob
Wikipedia
[পোস্টটির সর্বসত্ত্ব সকলের জন্য উন্মুক্ত]
রেজিস্টর
ভূমিকাঃ
ইলেকট্রনিক সার্কিটে বহুল ব্যবহৃত ডিভাইস রেজিস্টর। রেজিস্টরের মত অন্য কোন ডিভাইস এত বেশী ব্যবহার হয়না। রেজিস্টর চেনেনা এমন কোন ইলেকট্রনিক প্রেমী হবিস্ট হয়তো খুজে পাওয়া যাবেনা। কিন্তু এই চেনা জানার মধ্যে রয়েছে কিছু সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতা, রয়েছে কিছু ত্রুটি বিচ্যূতি। তাই প্রায়ই দেখা যায় কোন প্রজেক্ট শুরু করে অর্ধেক সম্পন্ন না হতেই ব্যর্থ হয়ে প্রজেক্ট বাদ দেন অনেক শিক্ষার্থী এবং হবিস্ট। ইলেকট্রনিক হবিস্টদের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট এবং ডিভাইস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক, নতুবা তারা সঠিকভাবে প্রজেক্ট তৈরী করতে সক্ষম হবে না। আমি ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস সম্পর্কে পোস্ট দেবার ইচ্ছা পোষণ করি যাতে তরুন উদীয়মান মেধাবী হবিস্টরা সাহায্য পেতে পারে এবং তাদের জ্ঞানের পরিধি আরো প্রসস্ত হতে পারে। আজ এই পোস্টে রেজিস্টর সম্পর্কে আমার জ্ঞানের আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ রচনার নিমিত্ত বিষয়টির সাথে সংগতিপূর্ণ সর্বাধিক তথ্য উপস্থাপনে সচেস্ট হব যাতে তরুন হবিস্টরা একটি পোষ্ট পড়েই তাদের সম্ভাব্য সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়, এতে করে পোষ্টটি বড় হবে বটে কিন্তু তাদের দারুন উপকার হবে মনে করি। এত প্রচেষ্টা ও আয়োজন সত্ত্বেও বর্ণ ও শব্দের উপস্থাপনে থাকবে কিছু ত্রুটি, কিছু অপূর্ণতা, কিছু অপ্রাপ্তি তার পরও বিষয়গুলি নজরে আনলে ভবিষ্যতের পোস্টগুলি করা যাবে আরো বেশী সমৃদ্ধ ও নির্ভূল।
রেজিস্টর ও রেজিস্ট্যান্সঃ
রেজিস্টর ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস বা সার্কিট ইলিমেন্ট যা এর সামর্থ্য অনুযায়ী বিদ্যূৎ প্রবাহকে বাধা দিতে পারে। রেজিস্টরের বৈশিষ্ট্যকে রেজিস্ট্যান্স বলা হয়। অর্থাত রেজিস্টর হলো ডিভাইসের নাম এবং রেজিস্ট্যান্স হলো ঐ ডিভাইসের গুণ বা বৈশিষ্ট।
উদাহরণ দিয়ে বলি, রাস্তায় গাড়ীর গতিকে বাধা দিতে চাইলে আমরা সেখানে স্পীড ব্রেকার স্থাপন করি যা গাড়ীর গতিকে বাধা দেয় এবং স্পীড ব্রেকার ব্যবহার করলে গাড়ীর গতি কমে যায়। তাহলে স্পীড ব্রেকার হল ডিভাইস এবং গাড়ীর গতিকে বাধাগ্রস্থ করা হল এর গুণ। রেজিস্টরের ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যপার, রেজিস্টর হলো ডিভাইস এবং বিদ্যূৎ প্রবাহকে বাধা দেয়া এর বৈশিষ্ট বা গুণ।
প্রতীকঃ
বৈদ্যূতিক স্ক্যামিটিক ডায়াগ্রামগুলিতে রেজিস্টরকে প্রকাশ করার জন্য নিম্নের প্রতীকগুলি ব্যবহার করা হয়।
পরিমাপের এককঃ
রেজিস্ট্যান্সের একক ওহম (Ohm) যাকে গ্রীক অক্ষর Ω দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যে পরিমান রেজিস্ট্যান্সের কারণে কোন রেজিস্টরের আড়াআড়িতে ১ ভোল্ট বিভব পার্থক্যে উক্ত রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে ১ এম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাকে ১ W ওহম বলে।
রেজিস্টরের কিছু বৈদ্যূতিক বৈশিষ্টঃ
১। রেজিস্টর একটি দুই টার্মিনাল বিশিষ্ট ডিভাইস
২। ইহা নন-পোলার ডিভাইস
৩। ইহা লিনিয়ার ডিভাইস
৪। ইহা প্যাসিভ ডিভাইস
এখন প্রশ্ন হলো কেন রেজিস্টরকে দুই টার্মিনাল, নন-পোলার, লিনিয়ার এবং প্যাসিভ বলা হলো? আসুন জানার চেষ্টা করি।
সাধারণতঃ রেজিস্টরের রেজিস্ট্যান্স দুই টার্মিনালের মধ্যে ক্রিয়া করে এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর দুটি টার্মিনাল থাকে বলে একে দুই টার্মিনাল ডিভাইস বলে। তবে কিছু পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্টর আছে যাদের তিনটি টার্মিনাল রয়েছে, যেমন পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাট। কোন সার্কিটের দুটি অংশের মাঝে পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্ট্যান্স প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিংবা ভোল্টেজ ডিভাইডার হিসাবে এগুলি ব্যবহার হয়। এগুলির কার্যকরী উপাদান রেজিস্টর হলেও এগুলিকে সরাসরি রেজিস্টর নামে অভিহিত করা হয়না বরং বালা হয় পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাট।
নন-পোলার বলতে বুঝায় যার কোন পোলারিটি বা ধণাত্বক-ঋণাত্বক প্রান্ত নেই। অনুরূপ রেজিস্টরের কোন পোলারিটি নেই। একে যে কোন ভাবে সার্কিটে সংযুক্ত করা যায় অর্থাৎ রেজিস্টরকে সার্কিটে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে পোলারিটি বিবেচনা করার প্রয়োজন হয়না।
লিনিয়ার ডিভাইস বলতে এমন ডিভাইস বুঝায় যার (Across) আড়াআড়িতে প্রযুক্ত ভোল্টেজ এবং উক্ত ভোল্টেজ সাপেক্ষে প্রবাহিত কারেন্টের মধ্যে সম্পর্ক সর্বদা সরল রৈখিক হয়।
যেমনঃ ২ ওহম রেজিস্ট্যান্স বিশিষ্ট কোন রেজিস্টরের আড়াআড়িতে ২, ৪, ৬ এবং ৮ ভোল্ট প্রয়োগ করলে এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্টের পরিমান যথাক্রমে ১, ২, ৩ এবং ৪ এম্পিয়ার হবে। এখন এই ডাটাগুলি ছক কাগজে স্থাপন করে বিন্দুগুলি সংযোগ করলে আমরা একটি সরল রেখা পাব যা ঐ ডিভাইসের জন্য ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে এবং এই সম্পর্ক সকল মানের রেজিস্টর এবং সকল ভোল্টেজ মানের জন্য সর্বদা সরল রৈখিক হয়। একারণে রেজিস্টরকে লিনিয়ার ডিভাইস বলা হয়।
একটিভ ডিভাইস বলতে বুঝায় সেই সকল ডিভাইস যাকে ক্রিয়াশীল করতে বাহ্যিক পাওয়ার সের্সের প্রয়োজন হয় এবং ইহা সিগনালের গেইন সৃষ্টিতে সক্ষম। পক্ষান্তরে প্যাসিভ ডিভাইসগুলি কোন শাক্তি উৎসের উপর নির্ভশীল নয় এবং কোন সার্কিটে পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে না। এই ধরনের ডিভাইসগুলি সিগনালের পাওয়ার গেইন সৃষ্টিতেও অক্ষম হয়। রেজিস্টর পাওয়ার গেইন সৃষ্টিতে অক্ষম। ইহা একটি প্যসিভ ইলিমেন্ট।
প্রকারভেদঃ
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে রেজিস্টরের শ্রেনীবিভাগ করা যায়। তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
রেজিস্ট্যান্সের ধরণের উপর ভিত্তি করে রেজিস্টর দুই ধরণের হয়ে থাকেঃ
১। স্থির মানের রেজিস্টর
২। পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্টর (পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাট)
রেজিস্টিভ উপাদানের (যে উপাদানে রেজিস্টর তৈরী হয়) উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত প্রকারের হয়ে থাকেঃ
১। কার্বন কম্পোজিশন রেজিস্টর (সর্বদা স্থির মানের হয়)
২। ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর (স্থির ও পরিবর্তনশীল উভয় মানের হয়)
৩। ফিল্ম-টাইপ রেজিস্টর (স্থির ও পরিবর্তনশীল উভয় মানের হয়)
৪। সারফেস মাউন্ট রেজিস্টর (সর্বদা স্থির মানের হয়)
৫। ফিউজ্যাবল রেজিস্টর (সর্বদা স্থির মানের হয়)
৬। আলোক সংবেদনশীল রেজিস্টর (সর্বদা পরিবর্তনশীল মানের হয়)
৭। তাপ সংবেদনশীল রেজিস্টর (সর্বদা পরিবর্তনশীল মানের হয়)
গঠনঃ
১। কার্বন কম্পোজিশন রেজিস্টরঃ
ইহা কার্বন রেজিস্টর নামেই অধিক পরিচিত। ইলেকট্রনিক সার্কিটে এই ধরণের রেজিস্টর সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয়। এই ধরণের রেজিস্টরের কার্যকরী রেজিস্টিভ উপাদান হলো কার্বন বা গ্রাফাইট। গ্রাফাইটের গুড়ার সাথে অন্য একটি ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়াল যেমন সিরামিকের গুড়া মিশিয়ে কম্পেজিশন তৈরী করা হয়। উক্ত কম্পোজিশন পদার্থ দ্বারা একটি সলিড সিলিন্ড্রিক্যাল রড তৈরী করে এই রডের দুই প্রান্ত হতে ধাতব ক্যাপ সংযুক্ত করে টার্মিনাল বের করা হয়। এবং কার্বন কম্পোজিশন রডটি একটি প্লাস্টিক কভার বা কোটিং দ্বারা আবৃত করে এর উপরে বিভিন্ন রঙের কোড দেয়া হয়। বিভিন্ন রঙের কোডগুলির বিশেষ সংখ্যাবাচক মান রয়েছে যা সম্মিলিতভাবে রেজিস্টরের মানকে প্রকাশ করে। কার্বন রেজিস্টর সাধারণতঃ ক্ষুদ্র আকৃতির হয়ে থাকে বিধায় এর গায়ে রেজিস্ট্যান্সের মান লিখে প্রকাশ করা সম্ভব হয়না, এজন্য কালার কোডের মাধ্যমে মান প্রকাশ করা হয়।
রেজিস্টরের মান নির্ভর করে কার্বন এবং ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের অনুপাতের উপর। যদি ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের পরিমান বেশী এবং কার্বনের পরিমান কম হয় তাহলে উচ্চ রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হয় আর ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের পরিমান কম এবং কার্বনের পরিমান বেশী হলে নিম্ন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হয়।
কার্বন রেজিস্টরের মান সাধারণতঃ ০.৪৭ ওহম হতে ২০ মেগা ওহম পর্যন্ত বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড মানে হয়ে থাকে। এর পাওয়ার রেটিং ১/১০, ১/৮, ১/৪, ১/২, ১ এবং ২ ওয়াট স্ট্যান্ডার্ড মানে পাওয়া যায়। এই রেজিস্টর আকারে ছোট দামে খুব সস্তা এবং ইলেকট্রনিক সার্কিটে সর্বাধিক ব্যবহৃত রেজিস্টর।
২। ওয়্যার উন্ড রেজিস্টরঃ
এই ধরণের রেজিস্টরে কার্যকরী উপাদান হিসাবে সাধারণতঃ নাইক্রোম, টাংস্টেন এবং ম্যাংগানিন ধাতব তার ব্যবহার করা হয়। এই ধাতব তারগুলির দৈর্ঘ্য এবং আপেক্ষিক রোধের উপর ভিত্তি করে উক্ত রেজিস্টরের মান নির্ধারণ হয়। তার গুলিকে সিরামিক কিংবা সিমেন্ট নির্মিত সিলিন্ডারের উপর প্যাঁচানো হয় এবং তারের দুই প্রান্তে টার্মিনাল সংযুক্ত করা হয়। এরপর তার প্যাঁচানো সিলিন্ডারটি ইনসুলেটিং কোটিং দ্বারা ঢেকে দেয় হয়, কখনো কখনো তার সহ সিলিন্ডারটি সিরামিক নির্মিত কেসের মধ্যে স্থাপন করা হয়। নিচের চিত্রে একটি স্থির মানের ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর দেখানো হয়েছে। এর গায়ে এর মান লেখা দেখা যাচ্ছে ১০০ ওহম এবং পাওয়ার রেটিং ৭ ওয়াট। এটি কার্যকর অবস্থায় বেশ গরম হয়ে থাকে।
ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর যদি পরিবর্তনশীল মানের হয় তবে তাকে রিহোস্ট্যাট বা পটেনশিওমিটার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। নিম্নে একটি রিহোস্ট্যাটের ছবি দেয়া হলো। এর গঠন অন্যান্য ওয়্যার উন্ড রেজিস্টরের মতই তবে পার্থক্য হলো এর তিনটি টার্মিনাল থাকে যাকে ১, ২ এবং ৩ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর ৩নং কানেকটরের সাথে অতিরিক্ত একটি স্লাইডার কানেকটর যুক্ত থাকে যা রেজিস্ট্যান্স ওয়্যারের উপর দিয়ে ঘর্ষণের মাধ্যমে চলাচল করতে পারে। ১ এবং ২ নং টার্মিনালের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থির মানের রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায় এবং ৩ নং এর সাথে ১ ও ২ নং টার্মিনালগুলির মাঝে পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়। এর গায়ে রেজিস্ট্যান্সে মান এবং কত এম্পিয়ারে একে ব্যবহার করা যাবে তা লিখা থাকে।
রিহোস্ট্যাটকে কোন সার্কিটে এডজাস্টেবল ভেরিয়েবল রেজিস্টর হিসাবে ব্যবহার করা যায়। রিহোস্ট্যাটগুলি উচ্চ কারেন্ট সরবরাহ করতে পারে বলে সাধারণতঃ উচ্চ কারেন্ট সার্কিটে ইহা বেশী ব্যবহার হয়। অন্যান্য রেজিস্টরের তুলনায় রিহোস্ট্যোটে টলারেন্স ফ্রি রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়। ইহা ৫ ওয়াট হতে ১০০ ওয়াট পর্যন্ত পাওয়ার রেটিং এ পাওয়া যায়। এর রেজিস্ট্যান্স কয়েক ওহম হতে কয়েক কিলো ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটি কার্যকর অবস্থায় বেশ গরম হয়ে থাকে।
৩। ফিল্ম-টাইপ রেজিস্টরঃ
ফিল্ম টাইপ রেজিস্টর দুই ধরণের হয়ে থাকে। ১) কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর এবং ২) মেটাল ফিল্ম রেজিস্টর। উভয় প্রকার রেজিস্টরের গঠন প্রায় একই রকম। কার্বন ফিল্ম রেজিস্টরে একটি সিরামিক দন্ডের উপর হাইড্রো-কার্বন যৌগ অথবা অন্য কার্বন যৌগের পাতলা ফিল্ম বা প্রলেপ তৈরী করা হয়। পরে উক্ত প্রলেপকে মেশিনের সাহায্যে এমন ভাবে কাটা হয় যেন দন্ডের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত স্পাইরাল আকৃতির একটি পরিবাহী পথ সৃস্টি হয় যা চিত্রে দেখানো হয়েছে। কার্বন ফিল্ম নির্মিত এই পরিবাহী পথটি রেজিস্টরের কার্যকরী উপাদান হিসাবে কাজ করে। এবার কার্বন ফিল্মের দুই প্রান্ত হতে মেটাল ক্যাপ বিশিষ্ট লম্বা টার্মিনাল সংযোগ করা হয় এবং কার্বন ফিল্মসহ সিরামিক রডটি ইনসুলেটিং কভার দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়। কালার কোডের মাধ্যমে মান প্রকাশ করা হয়।
এই ধরনের রেজিস্টরের কার্যকরী রেজিস্ট্যান্স কার্বন যৌগের কার্বন ও অন্য উপাদানের অনুপাতের উপর নির্ভর করে। এই ধরনের রেজিস্টরের মান কার্বন কম্পোজিশনের তুলনায় বেশী একুরেসি বিশিষ্ট হয় এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনে রেজিস্ট্যান্স খুব বেশী পরিবর্তন হয় না ফলে তা গুণগত মানে উত্তম। এদের মান কয়েক ওহম হতে কয়েক মেগা ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
মেটাল ফিল্ম রেজিস্টরের গঠন কার্বন ফিল্ম রেজিস্টরের মতই তবে এক্ষেত্রে কার্যকরী উপাদান হিসাবে কার্বন ব্যবহার না করে মেটাল ব্যবহার করা হয়। রেজিস্ট্যান্সের মান মেটালের আপেক্ষিক রোধ, ফিল্মের প্রসস্ততা ও দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে। মেটাল ফিল্ম রেজিস্টরগুলি খুবই কম টলারেন্স বিশিষ্ট হয় এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এদের রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন হয়না বললেই চলে। একারনে মেটাল ফিল্ম রেজিস্টরগুলি কার্বন কম্পোজিশন ও কার্বন ফিল্মের তুলনায় গুণগত মানে খুবই উত্তম। এদের মান কয়েক ওহম হতে কয়েক মেগা ওহম পর্যন্ত হয়ে থাকে। কালার কোডের মাধ্যমে মান প্রকাশ করা হয়।
৪। সারফেস মাউন্ট রেজিস্টরঃ
এই রেজিস্টরকে অনেকে চীপ রেজিস্টর বলে থাকে। এই প্রকার রেজিস্টরে একটি সিরামিক বেজের উপর মোটা কার্বন কম্পোজিশনের ফিল্ম/স্তর সৃস্টি করা হয় এবং স্তরটি কার্যকরী উপাদান হিসাবে কাজ করে। কার্বন কম্পোজিশনের কার্বন ও ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের অনুপাতের উপর এর মান নির্ভর করে। কার্বন ফিল্মের সাথে ইনার ইলেকট্রোড যোগ করা হয় এবং ইনার ইলেকট্রোডের সাথে বহিস্থ টার্মিনাল সংযোগ করা হয়, এই টার্মিনালের সাথেই সোল্ডারিং করা হয়। কার্বন ফিল্মকে একটি প্লাস্টিক অথবা কাঁচের কভার দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়।
এই রেজিস্টরগুলি আকৃতিতে খুব ছোট এবং ইহা মাদার বোর্ড সহ বিভিন্ন সুক্ষাতি সুক্ষ ইলেকট্রনিক সার্কিটে বেশী ব্যবহার হয়। এই রেজিস্টরগুলি বোর্ডের তলে স্থাপন করে উভয় পাশের টার্মিনালকে মাদার বোর্ডের কপার ট্রেসের সাথে সোল্ডারিং করে লাগানো হয়, এজন্য এদের সারফেস মাউন্ট বলা হয়। এদের মান কয়েক ওহম হতে কয়েক কিলোওহম পর্যন্ত হয় এবং এদের পাওয়ার রেটিং সাধারণতঃ ১/৪ থেকে ১/৮ ওয়াটের মধ্যে হয়ে থাকে। এর গায়ে বিশেষ কোডিং পদ্ধতিতে মান লিখা থাকে।
চিত্রে আঙ্গুলের সাথে তুলনা করে এর আকার বোঝানো হয়েছে। এরা সাধারণতঃ ০.১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা এবং ০.০৬৩ ইঞ্চি পর্যন্ত প্রসস্ত হয়ে থাকে। এরা খুব টেম্পারেচার স্ট্যাবল এবং আর্দ্রতা প্রতিরোধক বলে বেশী আর্দ্রতায় রেজিস্ট্যান্স স্থির থাকে।
৫। ফিউজ্যাবল রেজিস্টরঃ
এগুলি বিশেষ ধরণের ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর যা একই সাথে রেজিস্টর এবং ফিউজ হিসাবে কাজ করে। যখন কারেন্ট প্রবাহ রেজিস্টরের পাওয়ার সীমা অতিক্রম করে তখন এটি পুড়ে সার্কিটকে ওপেন করে ফেলে।
৬। আলোক সংবেদনশীল রেজিস্টর (LDR)
ইহাকে Photo Resistor, Photo conductor বলা হয়ে থাকে। ইহাতে কার্যকরী উপাদান হিসাবে সেমিকন্ডাকটর ম্যাটেরিয়াল যেমনঃ ক্যাডমিয়াম সালফাইড (CdS) ব্যবহার করা হয়। যখন ক্যাডমিয়াম সালফাইড এর উপর ফোটন আপতিত হয় তখন এর ইলেকট্রনগুলি শক্তি গ্রহণ করে কন্ডাকশন ব্যান্ডে চলে এসে পরিবাহীতা বৃদ্ধি করে ফলে রেজিস্ট্যান্স কমে যায়। এভাবে আলোকের ইপস্থিতিতে অথবা আলোকের তীব্রতার উপর নির্ভর করে এর রেজিস্ট্যান্স হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। আলোক বাড়লে রেজিস্ট্যান্স কমে এবং আলোক তীব্রতা কমলে রেজিস্ট্যান্স বাড়ে। রোবোটিকস টেকনোলজিতে বেশী ব্যবহার হয় এছাড়া লাইট সেন্সর হিসাবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সার্কিটে ব্যবহার হয়।
৭। তাপ সংবেদনশীল রেজিস্টর (Thermistor)
ইহাকে কখনো কখনো রেজিস্ট্যান্স টেমপারেচার ডিটেকটর বলা হয়। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সাথে থার্মিস্টরের রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন হয়।
৮। পটেনশিওমিটারঃ
পটেনশিওমিটার একটি তিন টার্মিনাল বিশিষ্ট ভেরিয়েবল রেজিস্টর। নিচে একটি পনেশিওমিটারের চিত্র দেয়া হয়েছে। এর ১ এবং ৩ নং টার্মিনালের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থির মানের রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়। ১ অথবা ৩ নং এর সাথে ২ নং টার্মিনালটি ব্যবহার করে শ্যাফটটি ঘুরালে পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্টর পাওয়া যায়।
এর আভ্যন্তরীণ গঠন নিচে দেখানো হয়েছে। এর অভ্যন্তরে একটি বৃত্তাকার এবানাইট পাতের উপর গ্রাফাইটের স্তর তৈরী করা হয় এই স্তরটি মূলতা কার্যকরী উপাদান হিসাবে কাজ করে। এর উপর দিয়ে একটি মেটাল স্লাইড কন্টাক্ট শ্যাফটের সাহায্যে ঘুরতে পারে। ফলে যে কোন এক প্রান্তের সাথে পরিবর্তনশীল মানের রেজিস্ট্যান্স পাওয়া যায়।
এগুলি কয়েক ওহম হতে কয়েক মেগা ওহম হতে পারে। এগুলি খুব বেশী কারেন্ট প্রবাহ করতে পারেনা বলে রিহোস্ট্যাট হিসাবে ব্যবহার করা হয়না এগুলিকে পটেনশিওমিটার হিসাবে বেশী ব্যবহার করা হয়।
পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাটের মধ্যে পার্থক্য কী?
পটেনশিওমিটার এবং রিহোস্ট্যাট উভয়েই ভেরিয়েবল রেজিস্টর এবং উভয়ের তিনটি করে টার্মিনাল আছে। কিন্তু কিছু ব্যবহারিক পার্থক্য আছে। যেমনঃ
পটেনশিওমিটারের স্থির টার্মিনালদ্বয় সিগনাল সোর্সের সাথে প্যরালালে সংযোগ করে পরিবর্তনশীল টার্মিনাল হতে আউটপুট নেয়া হয়। এক্ষেত্রে লোডে ভোল্টেজ সরবরাহ হয়। অর্থাত পটেনশিওমিটার ভোল্টেজকে পরিবর্তন করে। এ কারনে এই ডভাইসের নাম পটেনশিওমিটার। পক্ষান্তরে রিহোস্ট্যাটে স্থির টার্মিনালদ্বয় ব্যবহার না করে একটি স্থির ও একটি পরিবর্তনশীল মোট দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করা হয় এবং এতে লোডে পরিবর্তনশীল কারেন্ট সরবরাহ হয়। একারনে এই ডিভাইসকে রিহোস্ট্যাট বলা হয়। ওয়্যার উন্ড ভেরিয়েবল রেজিস্টরগুলি বেশী কারেন্ট প্রবাহে সক্ষম বলে এদের রিহোস্ট্যাট হিসাবে বেশী ব্যবহার করা হয়। আর ফিল্ম ভেরিয়েবল রেজিস্টরগুলি কম কারেন্ট প্রবাহ করতে পারে বলে এদেরকে পটেনশিওমিটার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মোটকথা এই যে সংযোগ প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে ভেরিয়েবল রেজিস্টরগুলিকে কখনো রিহোস্ট্যাট এবং কখনো পটেনশিওমিটার হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
রেজিস্টরের পাওয়ার রেটিং কি?
যখন কোন রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহ ঘটে তখন রেজিস্টরে তাপ আকারে কিছু পাওয়ার অপচয় হয় এবং রেজিস্টরটি গরম হয়। উৎপন্ন তাপমাত্রা প্রবাহিত কারেন্টের উপর নির্ভর করে। কারেন্ট বেশী হলে উৎপন্ন তাপ বেশী হয় এবং কম হলে তাপ কম হয় এমনকি বেশী তাপমাত্রার কারনে রেজিস্টরটি পুড়ে যেতে পারে। সর্বোচ্চ যে পরিমান কারেন্ট প্রবাহ করলে অথবা যে পরিমান পাওয়ার অপচয় হলে একটি রেজিস্টর পূর্ণ দক্ষতার সাথে দীর্ঘ দিন কাজ করতে পারে তাকে ঐ রেজিস্টরের পাওয়ার রেটিং বলে একে ওয়াট এককে প্রকাশ করা হয়। যেমন একটি ১ ওয়াট রেটিং এর ১০০ ওহম রেজিস্টর বলতে যা বুঝায় তা গাণিতিক ভাবে বুঝার চেষ্ট করি।
অর্থাত একটি ১ ওয়াট রেটিং এর ১০০ ওহম রেজিস্টরের মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ০.১ এম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহ করলে তা নিরাপদ থাকবে এর বেশী কারেন্ট প্রবাহ করলে রেজিস্টরটি পুড়ে যাবে।
রেজিস্টরের মান প্রকাশ করা বা লিপিবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। যেমন ওয়্যারউন্ড রেজিস্টরগুলিতে এর গায়ে ওহমিক মান ও পাওয়ার রেটিং লিখে প্রকাশ করা হয়। ছোট আকৃতির রেজিস্টর যেমন- কার্বন কম্পোজিশন, কার্বন ফিল্ম টাইপ, মেটাল ফিল্ম ইত্যাদিতে মান লিখার মত যথেষ্ট যায়গা থাকেনা বলে কালার কোডের মাধ্যমে মান লিপিবদ্ধ করা হয়। চীপ রেজিস্টরে বিশেষ কোডিং পদ্ধতিতে মান প্রকাশ করা হয়। কালার কোড পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
কালার কোড পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে মান সরাসরি না লিখে বিভিন্ন রঙীন কোডের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই কালার কোডগুলির বিভিন্ন মান রয়েছে তা জেনে নিই।
দুই ধরনের কারার কোড পদ্ধতি রয়েছে, ৪ ব্যান্ড ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি। ৪ ব্যান্ডের ৫ ব্যান্ড পদ্ধতিতে বেশী সুক্ষ মান প্রকাশ করা যায়। ৪ ব্যান্ড পদ্ধতিতে ১ম ব্যান্ড প্রথম ডিজিট ২য় ব্যান্ড দ্বিতীয় ডিজিট এবং ৩য় ব্যান্ড গুণক রাশি এবং ৪র্থ ব্যান্ড টলারেন্স প্রকাশ করে। একটি উদাহরণ লক্ষ করি।
প্রথম ব্যান্ড হলুদ দ্বিতীয় বেগুনী ৩য় ব্যানড লাল ফলে এর মান ৪৭০০ ওহম। চতুর্থ ব্যান্ড রুপালী অর্থাত এর মান ৪৭০০ ওহমের ১০% কম অথবা বেশী হতে পারে। নিচে ৫ ব্যান্ড পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।
টলারেন্স কী?
যখন রেজিস্টর কারখানায় তৈরী হয় তখন কারখানার যান্ত্রিক ত্রুটি এবং রেজিস্টভ উপাদানের মিশ্রনের তারতম্যের কারনে ১০০ ভাগ সঠিক মান পাওয়া যায়না বরং প্রকৃত মান হতে কিছুটা বিচ্যূতি ঘটে এই বিচ্যূতিকে টলারেন্স বলে।
চীপ রেজিস্টর কোডিং পদ্ধতিঃ
চীপ রেজিস্টর ৩ ডিজিট এবং ৪ ডিজিট কোডে মান প্রকাশ করে থাকে। নিচের উদাহরণ লক্ষ করুন-
অনুরূপঃ
অনেক সময় কাংখিত মানের রেজিস্টর বাজারে কিনতে পাওয়া যায়না বা প্রয়োজনীয় মানের রেজিস্টরটি স্ট্যান্ডার্ড মানের অন্তর্ভূক্ত থাকে না। তখন রেজিস্টর সমবায় করে ব্যবহার করতে হয়। শ্রেনী অথবা সমান্তরাল সমবায়ের মাধ্যমে কাংখিত মানটি তৈরী করা হয়। যেমন আপনার যদি ১.১ ওহমের রেজিস্টর প্রয়োজন হয় কিন্তু আপনার আছে ২.২ ওহমের রেজিস্টর তাহলে দুটি ২.২ ওহমের রেজিস্টর সমান্তরাল সমবায়ে ১.১ ওহমের রেজিস্টর তৈরী করতে পারেন। বিষয়টি বিস্তারিত বুঝানোর মত ধৈর্য্য এখন আমার নেই।
আমার যতটুকু জ্ঞান ছিল সবটুকু লিখেছি হয়তো কিছু বাদ পড়েছে অনিচ্ছাকৃত। শেষে বলতে চাই আপনাদের উপকারে পোষ্টটি দিলাম, আশা করি আপনাদের উপকার হবে, আপনাদের উপকার হলে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা লিখতে ভালবাসি। ভবিষ্যতে আবারো হয়তো আসবো আপনাদের কাছে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।
No comments:
Post a Comment